গোলাপের চারা রোপণ ও পরিচর্যা পদ্ধতি

গোলাপ চাষের জন্য উপযুক্ত জমি নির্বাচন করা বিশেষ প্রয়োজন। এমন ধরনের জমি গোলাপ চাষের জন্য দরকার যেখানে জল জমে থাকবে না। আলো বাতাসে পরিপূর্ণ এবং সমতল জমি দরকার। দোআঁশ মাটিতে গোলাপ চাষ হয়। জমি যদি শুকনো খটখটে থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছুদিন আগে থেকে কয়েকবার মই দিয়ে চাষ করতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে নরম করে নিতে হবে এবং জৈব সার মিশ্রণ করতে হবে। গোলাপের চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে মাটিতে গর্ত করে রেখে দিতে হবে। এবং ৫ কেজি পচা গোবর পাঁচ কেজি পচা পাতা ৫০০ গ্রামের মতো ছাই মিশিয়ে গর্তে আগে থেকে দিয়ে রাখতে হবে। তারপর ১৫ দিনে এটা পচে মাটির সঙ্গে মিশে গেলে তারপর গোলাপ গাছ লাগাতে হবে এতে করে গোলাপ ফুল অনেক বড় হবে এবং শক্তিশালী হবে।

২৫ থেকে ৩০ সেমি এবং ২০ থেকে ৩০ সেমি আয়তনে গর্ত তৈরি করতে হবে। সাধারণত গোলাপ চারা গুলো পলিথিন ব্যাগে থাকে তাই পলিথিন ব্যাগ গুলো আলতো করে খুলে গর্তে ঠিকভাবে বসাতে হবে। যেহেতু গোলাপ গাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে তাই নির্দিষ্ট পরিমাণে জায়গা ফাঁকা রেখে প্রতিটি গাছ লাগাতে হ হবে। চারা গাছের গোড়ায় কোন অংশ যদি শুকিয়ে যায় সে অংশটা কেটে ফেলে এবং আগার দিকে কোন অংশ শুকিয়ে গেলে সেটাও কেটে ফেলে তারপর লাগাতে হবে।

গোলাপের চারা লাগানোর ২-৩ দিন পর থেকেই গোলাপ গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।

গোলাপ গাছ লাগানোর দু তিন দিন পরেই পানি শেষ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বৃষ্টি হলে পানি সেচ দেয়ার দরকার নেই পানি বেধে থাকলে সেটা বের করার ব্যবস্থা করতে হবে।

গোলাপ গাছের জমিতে অনেক আগাছা হয়ে থাকে। এবং এই আগাছা গুলো বারবার তুলে ফেলে দিতে হয়। বারবার তুলার পরও আগাছা হতেই থাকে। তাই আমাদের সবসময়ই আগাছা গুলো ফেলে দিতে হবে তুলে।

গোলাপ গাছের ফুল ফোটার আগে ডালপালাগুলো ছোট ছোট করে কেটে ছাটাই করতে হবে এক্ষেত্রে বেশি ডাল গজাবে এবং ফুল বেশি হবে। পুরাতন ও রোগাক্রান্ত ডালপালা আগে ছাটাই করতে হবে। আমাদের উচিত প্রতি বছরই গোলাপ গাছের ডালপালা ভালোভাবে ছাটায় করা উচিত এক্ষেত্রে আমাদের ফুল অনেক বড় বড় হবে এবং গাছ ঝাপড়া হবে।

অনেক সময় গোলাপ গাছের কিয়ারিতে জলবদ্ধতা হতে পারে সব সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে গোলাপ গাছের গোড়ায় যেন জল ও বদ্ধতা না হয় এতে গোলাপ গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। গোলাপ গাছ জলবদ্ধতার সহ্য করতে পারে না তাই আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে গোলাপ গাছের কিয়ারেতে জল জমতে দেওয়া যাবে না।

অনেক সময় গাছ ছাটাইয়ের পর বড় কুলি সাথে অনেক ধরনের ছোট ছোট কুড়ি হয়ে থাকে। আমাদের সে ধরনের কুঁড়িগুলো ছাটাই করতে হবে কারণ শেষ ধরনের কুঁড়িগুলো থেকে বড়ফুল পাওয়া যায় না আর বড় ফুল পেতে হলে সেগুলো কুড়ি ছাঁটাই করে বড় বড় করি গুলো রেখে দিতে হবে।

বিটল পোকা গোলাপ গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকারক একপ্রকার এক পোকা।

বিটল পোকা গোলাপ গাছের কুড়ি এবং পাতাগুলো ছিদ্র করে খেতে থাকে। সাধারণত রাতের বেলায় এই পোকাগুলো গোলাপ গাছের ক্ষতি করে থাকে তাই আমাদের আলোর হাত পেতে এই পোকাগুলোকে দমন করতে হবে।

কালো দাগ পরা রোগ সাধারণত ছত্রাক জনিত রোগ। যে সমস্ত গাছ দুর্বল হয়ে থাকে সেই গাছগুলোকে এই ছত্রাক আক্রমণ করে বেশি। এবং ছত্রাক আক্রমণ করার গাছের পাশাপাশি আরো যে গাছগুলো আছে সেগুলো আক্রমণ করে তাদেরকে দুর্বল করে ফেলে।

 সাধারণত চৈত্র মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এই রোগের আক্রমণ বেশি হয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় পানি জমে যেন না থাকে এই রোগ এই গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে বেশি হয় এবং আমাদের ব্যবহার করতে হবে। যে সমস্ত গাছে বেশি আক্রান্ত হবে সেই সমস্ত কাজ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

প্রতি তিন মাস পর পর চুন পানি দিতে হবে। চুন পানি দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আর কোন হার দেওয়া যাবে না শুধু পানি দিতে হবে গাছে।

গোলাপ গাছের জন্য ডাইব্যাক রোগ বেশ ক্ষতিকর। গাছের নানা অংশ কালো হয়ে গাছ নষ্ট করে ফেলে এই ডাইব্যাক রোগ। ডাই ব্যাক রোগ সাধারণত গোলাপ গাছ ছাটাই করার পর কাটা অংশে হয়ে থাকে। রোগ দমন করতে হলে গাছের কাঁটা অংশ থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং চাকু জীবননাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

আমরা যারা গোলাপ গাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তারা অবশ্যই গোলাপ গাছ চাষের পদ্ধতি পরিচর্যা রোপন পদ্ধতি এবং কোন চারা গুলো ভালো এই সব জেনেশুনে চাষ করতে শুরু করব। বিভিন্ন ধরনের নার্সারি থেকে গোলাপ গাছের পরিচর্যা শুনে এবং ভালো জাতের চারা কিনে গোলাপ চারা লাগাতে হবে। আমারএই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা গোলাপ গাছ রোপনের পদ্ধতি এবং গোলাপ গাছের পরিচর্যা আপনারা জানতে পারবেন।