চারা গাছ রোপন ও তার পরিচর্যা



চারা গাছ রোপনের সঠিক সময় হল বর্ষাকাল। কারণ বর্ষাকালে সবসময়ই বৃষ্টি হয়, যার কারণে মাটি অনেক নরম এবং মাটিতে প্রচুর পরিমাণে রস থাকে। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে গাছ বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। আমরা মাটিতে বা ছাদে টবে গাছ লাগালে গাছ খুব ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। তবে সবকিছু আগেই আমাদের খুব ভালো চারা কিনতে হবে।
চারাগাছ রোপন
সবার আগে আমাদের আদর্শ এবং ভালো জাতের চারা সংরক্ষণ করতে হবে। চারা কোনটা এটা বোঝার জন্য আমরা আলোচনা করতে পারি যারা নার্সারিতে কাজ করেন বা নার্সারি করেন। এবং চারা গাছকে কিভাবে যত্ন করব এটা আমরা যারা নার্সারি করে তাদের থেকে জেনে নিতে পারি।

ভূমিকা

জুন জুলাই মাসের দিকে চারা গাছ রোপন করলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। সে সময় প্রচুর আলো বাতাস ও বৃষ্টিপাত থাকে। কোন নার্সারি থেকে চারাগাছ কিনে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চারা গাছটি রোপন করলে অনেক সময় গাছ নষ্ট হয়ে যায় এক্ষেত্রে আমরা ভাবি হয়তো চারা গাছ ভালো ছিল না।

 এমনটা সবসময় নাও হতে পারে কারণ যখন আমরা নার্সারি থেকে গাছগুলো কিনে নিয়ে সেই রোপন করার জন্য এবং খুব তাড়াহুড়া করে মাটিতে বা ছাদের টপে রোপন করে দেই। এটা একদমই ভুল কাজ চারা গাছটিকে কিছুদিন আমাদের পলিব্যাগের মধ্যেই রাখতে হবে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য।

চারা গাছ রোপনের স্থান

সবার প্রথমে আমাদের চারা গাছটি যেখানে রোপন করব সেই উপযুক্ত জায়গা হতে হবে। আলো বাতাস বৃষ্টি এবং রোদ যেন সমান ভাবে সেখানে পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আলো বাতাস কম হলে চারা গাছ কখনোই ভালো ফলন দেয় না।

সব সময় চেষ্টা করব বাড়ির দক্ষিণ পাশে চারাগার রোপন করার। কারণ দক্ষিণা বাতাস চারা গাছের জন্য খুবই উপকার। এবং খুব বেশি চারা গাছ একসঙ্গে লাগানো জায়গাতে চারা গাছ রোপন করা যাবে না বা খুব বেশি গাছপালা আছে বড় বড় হয়ে গেছে সেরকম জায়গাতে চারা গাছ লাগানো যাবে না।

যে স্থানে আমরা চারাগাছ রোপণ করব শেষ স্থান আগে থেকেই কুবিয়ে মাটি গুলোকে আলগা করে নিতে হবে। সারা গাছ যেখানে রোপন করা হবে সেই স্থানে প্রথমেই বেশি সার দিয়ে ফেলবো না। এতে করে গাছ ভালো হওয়ার চাইতে খারাপ বেশি হয়। এবং বেলে দু আস মাটিতে চারা গাছ রোপন করব। এভাবে আমাদের চারা গাছের স্থান নির্বাচন করতে হবে।

চারা রোপণের কৌশল


চারা গাছ রোপনের এক দুই দিন আগে চারা গাছ রোপনের স্থানটি ভালোভাবে কোদালের সাহায্যে কুপিয়ে গর্ত গুলি করতে হবে।

চারা গাছ রোপনের উপযুক্ত সময় বিকেল বেলা। বিকেলের দিকে চারা গাছ রোপন করলে খুব ভালো ফল দেয়।

গাছ লাগানোর আগে চারাগাছে যে নার্সারি থেকে কিনে নিয়ে আসার সময় পলিথিন থাকে সেটাকে আস্তে আস্তে খুলে ফেলে গর্তে বসিয়ে দিতে হবে।

চারা গাছ রোপনের পর সুন্দর করে মাটিটাকে গোড়ার দিকে চেপে দিতে হবে যাতে কোনরকম বর্ষার জল ভিতরে না যেতে পারে।

বর্ষাকালে খুব বেশি বৃষ্টি হলে গাছ লাগানো যাবে না এতে করে গাছের গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই হালকা বৃষ্টিতে গাছ লাগাতে হবে।

নার্সারি থেকে চারা গাছ সংরক্ষণের সময় আমাদের ভালো মানের গাছ সংরক্ষণ করতে হবে।

রোপনের সময় সব সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের প্রধান শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

নার্সারি থেকে চারা সংরক্ষণের সময় গাছের গোড়ায় যে মাটি থাকে সেটা খুব শক্ত থাকে তাই বর্ষাকালে রোপণের সময় সেই মাঠটাকে ভেঙ্গে লাগানো যাবে না।

কোথায় এবং কি ধরনের চারা রোপন করা যায়

সব জায়গাতেই সব ধরনের চারা রোপন করলে গাছ ভালো হয় না। নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতে নির্দিষ্ট কিছু গাছ লাগালে বেশি ভালো হয়। চলুন জেনে নিই কোথায় কোথায় আমরা কি ধরনের গাছ লাগালে আমাদের গাছগুলো বেশি ভালো থাকবে।

স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির এর আশেপাশে বা সামনে আপনারা নারিকেল, তাল, খেজুর, সুপারি, আম, কাঁঠাল, কৃষ্ণচূড়া, লিচু এই ধরনের চারা গাছ রোপন করতে পারেন।

বাড়ির ছাদে কমলালেবু, কুল, জাম্বুরা, মেহেদী গাছ, লিচু এই ধরনের চারা গাছ রোপণ করতে পারেন।

বাড়ির আগিনাতে বা উঁচু জায়গাতে লিচু, খেজুর, আপেল কুল, আতা, বেল, ডালিম, কলা এই ধরনের চারা গাছ রোপন করলে বেশি ভালো হয়।

বড় জমিতে মেহগনি, সেগুন, আম, কাঁঠাল, বাশ, নারিকেল, শিশু, পাম গাছ ইত্যাদি চারা গাছ রোপন করতে পারেন।

রাস্তার ধারে উঁচু জায়গায় যেসব গাছের ডালপালা ছাঁটাই করা যায় সেই ধরনের চারা রোপন করলে বেশি ভালো হয়। যেমন সুপারি, খেজুর, পাম, ঝাল এবং বিভিন্ন ধরনের গাছ ও লাগাতে পারেন।

যে ধরনের রাস্তায় সবসময় গাড়ি চলাফেরা করে অর্থাৎ মহাসড়ক বলে সেই রাস্তায় শিল করোই, শিশু, মেহগনি, অর্জু্‌ন, নিম, দেবদারু, বকুল, পলাশ, পাম ইত্যাদি গাছ লাগাতে পারেন।

উপকূলীয় এলাকায় বাই্‌ন, কাঁকড়া, গরান, গোলপাতা, কেওড়া, এই ধরনের গাছ খুব ভালো হয়।

চারা গাছের পরিচর্যা

চারা গাছ শুধু লাগালেই হবে না তার যথাযথভাবে পরিচর্যা করতে হবে। একটি চারা গাছ সুন্দর এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পরিচর্যায় সহায়তা করে। সঠিকভাবে পরিচর্যা না করলে চারা গাছ মরে যেতে পারে। চলুন জেনে নিই কিভাবে আমরা সঠিকভাবে চারা গাছের পরিচর্যা করব।

রোপনের পর গরু ছাগল যাতে চারা গাছের কাছে না আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন ভাবে চারা গাছকে ঘিরে দিতে হবে যাতে গরু বা ছাগল চারা গাছের ক্ষতি করতে না পারে।

অনেক সময় চারা গাছের আশেপাশে অনেক ধরনের অবাঞ্ছিত গাছ হয়ে থাকে সেগুলো তুলে ফেলতে হবে।

গাছ রোপন করার পর শক্ত কোন কাঠি জাতীয় জিনিস দিয়ে শক্ত করে সোজা করে বেধে দিতে হবে।

চারাগাছে অনেক সময় বেশি ডালপালা হয়ে যাওয়ার কারণে গাছ নুয়ে পড়ে। গাছকে সোজা রাখতে হবে এজন্য অবাঞ্ছিত ডালপালা কেটে দিতে হবে।

বর্ষার সময় গাছ লাগানোর পর অনেক সময় বৃষ্টি হয় না সে ক্ষেত্রে আমাদের ঝর্ণার মত করে জল দিতে হবে।

গাছে যখন তখন পানি দেওয়া যাবে না নির্দিষ্ট সময়ে গাছে পানি দিতে হবে।

চারা গাছ রোপনের সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে সার মেশানো যাবে না কিছুদিন পর চারা গাছে জৈব এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।

অনেক সময় সাদা সাদা ফাঙ্গাস দেখা দেয়, নার্সারি করে এমন লোকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে বা হটিকালচার সেন্টারে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে এই গাছগুলো থেকে এই ফাঙ্গাসগুলো দূর করার উপায় কি।

চা গাছ লাগানোর পর কোন চারা মারা গেলে সে চারাটি তুলে ফেলে দিয়ে কোন ভালো মানের শক্ত চারা রোপন করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আমার মতে নার্সারি থেকে গাছ নেওয়ার সময় সেই গাছের কি ধরনের যত্ন প্রয়োজন তা নার্সারি বিশেষজ্ঞ থেকেই শুনে নিতে হবে। কারণ একেক গাছের একেক রকম ভাবে সার প্রয়োগ করতে হয় এবং যত্ন নিতে হয়। এবং গাছ রোপনের পর সঠিকভাবে তার পরিচর্যা করতে হবে। কিভাবে আপনারা গাছ রোপন করবেন এবং তার পরিচর্যা করবেন আমার এই আর্টিকেলটি পড়লেই বুঝতে পারবেন আমারে আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আমার পেজটি ঘুরে দেখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url